Saturday, October 13, 2012

চীন আন্তর্জাতিক বেতার কর্তৃক আয়োজিত নতুন প্রতিযোগিতা

'মনোহর নারিকেল দ্বীপ –হাইনান আন্তর্জাতিক পর্যটন দ্বীপ' শীর্ষক সাধারণ জ্ঞানের প্রতিযোগিতা শুরু


শ্রোতাবন্ধুরা, চীন আন্তর্জাতিক বেতার চলতি মাস থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বেতার ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে "মনোহর নারিকেল দ্বীপ---হাইনান আন্তর্জাতিক পর্যটন দ্বীপ" শীর্ষক সাধারণ জ্ঞানের প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে।প্রতিযোগিতা চলাকালে  সংশ্লিষ্ট চারটি প্রতিবেদন প্রচার করবে। প্রতিটি প্রতিবেদনের শেষে দুটি প্রশ্ন থাকবে। এর পাশাপাশি আপনারা সিআরআই অনলাইনের ওয়েবসাইটে এ প্রতিযোগিতা সম্পর্কিত ওয়েবপেইজও দেখতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, এ প্রতিযোগিতার অংশগ্রহণের সময় আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত।
প্রতিযোগিতার মূল্যায়ন কমিটি সব উত্তরপত্র থেকে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানের পুরস্কার এবং বিশেষ পুরস্কার নির্বাচন করবেন। বিশেষ পুরস্কার বিজয়ী বিনা খরচে চীন সফরের সুযোগ পাবেন।



লি জাতির 'বোনা কাপড়': চীনের বস্ত্রবয়ন ইতিহাসের 'জীবিত জীবাশ্ম'


** দক্ষিণ চীনের হাইনান প্রদেশ মনোরম গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দ্বীপের সৌন্দর্যের জন্য বিশ্বখ্যাত। এর মধ্যে সংখ্যালঘু জাতির রঙিন সংস্কৃতি হাইনানের পর্যটনশিল্পের এক অপরিহার্য অংশ। হাইনানে বসবাসকারী হান, লি, মিয়াও ও হুইসহ ২০টিরও বেশি জাতির মধ্যে, লি ও মিয়াও জাতির সংস্কৃতি সবচেয়ে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। 'লি' হচ্ছে হাইনানের আদি জাতিগোষ্ঠী। তারা বংশপরম্পরায় হাইনান দ্বীপের মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনাঞ্চলে বসবাস করে আসছে। এখনো পর্যন্ত তাদের নানা প্রথায় ও আচারে প্রাচীনকালের গভীর প্রভাব লক্ষণীয়। সম্প্রতি সিআরআইয়ের সংবাদদাতা হাইনান প্রদেশের সানইয়া শহরের কানশিলিংয়ের লি জাতির গ্রামে গিয়ে তাদের 'বোনা কাপড়' উত্পাদনের ঐতিহ্যগত প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবগত হন।
লি জাতির মানুষ লোকসংগীত গেয়ে পর্যটকদের নিজেদের গ্রামে স্বাগত জানান। এদের সংগীত সুমধুর। তবে লি জাতির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে তিনি হাজার বছরের ইতিহাসসমৃদ্ধ 'বোনা কাপড়'। অনেক আগেই তারা বস্ত্রবয়নের প্রযুক্তি আয়ত্ত করেছিল। লি জাতির বোনা কাপড়কে চীনের বস্ত্রবয়ন ইতিহাসের 'জীবিত জীবাশ্ম' বলে অভিহিত করা হয়। এটি চীনের প্রথম তুলার তৈরী বস্ত্র।লি জাতির 'বোনা কাপড়' এ জাতির নারীদের জ্ঞান ও কুশলতার নিদর্শন। হাইনান প্রদেশের বোনা কাপড় জাদুঘরের একজন টীকাকার লি জাতির মেয়ে চাং ইয়া। তিনি আমাদের সংবাদদাতাকে বললেন, "হাইনান দ্বীপের তুলা ও শিমুল তুলা হচ্ছে লি জাতির বোনা কাপড় উত্পাদনের কাঁচামাল। তিন হাজার বছর আগে থেকেই হাইনান দ্বীপে তুলা উত্পাদিত হত। তখন থেকে লি জাতির বোনা কাপড় উত্পাদনের ইতিহাসও শুরু হয়।" সুদীর্ঘ ইতিহাস আর সূক্ষ্ম কারিগরির জন্য লি জাতির বোনা কাপড় জনপ্রিয় হয়েছে। জানা গেছে, উচ্চমানের বোনা কাপড় তৈরি করতে চাইলে সুতা কাটা, কাপড় বোনা, রং করা এবং কাপড়ে ফুল তোলা--এ চারটি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়।




** লি জাতির ভাষা আছে, তবে সে-ভাষায় লেখা যায় না। বোনা কাপড় তৈরির সময় লি জাতির মেয়েরা কোনো সুনির্দিষ্ট নকশা অনুকরণ করে না। তাদের নিজেদের দেখা-শোনা ও অভিজ্ঞতার প্রতিফলন ঘটে বোনা কাপড়ের চিত্রে। বলা যায়, লি জাতির বোনা কাপড় হচ্ছে এ জাতির বিশেষ ঐতিহাসিক রেকর্ড। লি জাতির ইতিহাস ও সংস্কৃতি প্রতিফলিত হয় এ কাপড়ে বুননে। এ যেন কাপড়ে সৃষ্ট মহাকাব্য। ২০০৮ সালে লি জাতির পোশাক চীনের জাতীয় পর্যায়ের অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের দ্বিতীয় সারির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। হাইনানে লি জাতির বোনা কাপড় উত্পাদনের জন্য ইতোমধ্যেই কিছু সৃষ্টিশীল শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। হাইনানের চিনসিউচিপেই কোম্পানি লিমিটেড সেগুলোর অন্যতম। এ-কোম্পানির বোর্ড চেয়ারম্যান কুও খাই প্রথমে রাসায়নিক শিল্পের ব্যবসা করতেন। বহু বছর আগে তিনি হাইনানের উচিশান পাহাড় ভ্রমণের সময় প্রথমবারের মতো লি জাতির বোনা কাপড় দেখেন। তিনি লক্ষ্য করলেন, কয়েক শ বছর আগের তৈরি লি জাতির বোনা কাপড়ের রং এখনো উজ্জ্বল রয়ে গেছে। তা দেখে মাদাম কুও খাই মুগ্ধ হন। পরে তিনি জানতে পারেন যে, লি জাতির 'বোনা কাপড়' শিল্প ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।

২০০৫ সালে কুও খাই হাইনান চিনসিউচিপেই কোম্পানি লিমিটেড নিবন্ধিত করেন। তিনি এর মাধ্যমে লি জাতির 'বোনা কাপড়' শিল্পের ঐতিহ্য সংরক্ষণের উপায় খুঁজে বের করার উদ্যোগ নেন। বর্তমানে তাঁর কোম্পানির কাজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে: লি জাতির বোনা কাপড় নিয়ে গবেষণা, সংগ্রহ, উদ্ভাবন ও উন্নয়ন। এখন এ-কোম্পানি হচ্ছে হাইনানে লি জাতির বোনা কাপড় বিক্রয়ের বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে দেয়ালে ঝোলানোর জন্য বা বিছানার চাদর হিসেবে ব্যবহারের জন্য যেমন লম্বা ও বড় 'লি বোনা কাপড়' উত্পাদিত হচ্ছে, তেমনি অন্যান্য কাজে ব্যবহারের জন্য ছোটখাটো কাপড়ও উত্পাদন করা হয়। এসব পণ্যে প্রতিফলিত হচ্ছে লি জাতির সনাতন প্রযুক্তি ও শিল্প-কৌশল।
চীন সরকার ও বেসরকারি সংস্থার যৌথ প্রচেষ্টায় ২০০৯ সালের অক্টোবরে ইউনেস্কো লি জাতির বোনা কাপড় উত্পাদন প্রযুক্তি অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকার প্রথম কিস্তিতে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের মধ্যে হাইনান প্রদেশ লি জাতির বোনা কাপড় উত্পাদনের প্রযুক্তি সংরক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট গ্রাম এবং বস্ত্রবয়ন ও রং করার কাঁচামাল উত্পাদনের কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করবে। এসময় ঐতিহ্য সংরক্ষণ আইন ও বিধিবিধানও প্রণয়ন করা হবে। আশা করা যায়, এ-সব পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে, লি জাতির 'বোনা কাপড়' শিল্পের ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। 


ঐতিহ্যগত সাংস্কৃতিক পর্যটন হাইনান দ্বীপের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ মোহিনীশক্তি

** সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হাইনান প্রদেশ আন্তর্জাতিক পর্যটন দ্বীপ নির্মাণের সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিরন্তরভাবে উদ্ভাবন ও বিকাশ করেছে। তারা প্রাকৃতিক সম্পদ ও ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির সমন্বয় করার নতুন পদ্ধতি অন্বেষণ করেছে।এখন আপনারা শুনছেন হাইনান প্রদেশের পাওটিং কানশিলিংয়ের সুপারি উপত্যকার লি জাতিও মিয়াও জাতির সাংস্কৃতিক পল্লীতে পরিবেশিত 'সুপারির প্রাচীন সুর' নামক লি জাতি ও মিয়াও জাতির সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের রেকর্ডিং। হাইনান হচ্ছে বহু জাতি অধ্যুসিত প্রদেশ। দীর্ঘ ঐতিহাসিক উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় স্থানীয় সংখ্যালঘু জাতির জনগণ বৈচিত্র্যময় ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ঐতিহ্য সংস্কৃতি সৃষ্টি করেন। এটা হচ্ছে হাইনানের গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক পর্যটনের সম্পদ। হাইনান প্রদেশের পর্যটন উন্নয়ন কমিটির উপপ্রধান সুন ইং আমাদের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন, হাইনানের সানইয়া, লিংসুই, বাওটিং নগরে পর্যটকদের পরিদর্শনের জন্য জাতিগত পল্লী সংরক্ষিত রয়েছে। সেখানে বহুবিধ জাতিগত সাংস্কৃতিক কর্মসূচির আয়োজিত হয় এবং বহু পর্যটকদের আকর্ষণ করেছে। সুন ইং বলেন, "লি ও মিয়াও জাতির সংস্কৃতি আমরা খুব ভালোভাবে বিকাশ করেছি। যেমন সুপারি উপত্যকায় এক জাদুঘর আছে। সেই জাদুঘর লি জাতির গ্রামের ভিত্তিতে সংস্কার করে নির্মিত হয়েছে। আপনি সেখানে গিয়ে আসল লি জাতির সংস্কৃতি উপভোগ করতে পারেন। আমাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান 'লি জাতির কাহিনী' চীনের ১১টি বড় পুরস্কার পেয়েছে। আপনারা হাইনানে আসলে এ 'লি জাতির কাহিনী' দেখে গোটা লি জাতির সংস্কৃতির ওপর মোটামুটি ধারণা পাবেন।"




কানশিলিংয়ের সুপারি উপত্যকার লি ও মিয়াও জাতির সাংস্কৃতিক পর্যটন অঞ্চল হচ্ছে জাতীয় চারটি প্রথম পর্যায়ের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতি পর্যটন অঞ্চল। এ অঞ্চলের দু'পার হচ্ছে ঘন বন, মাঝখানে একটি কয়েক কিলোমিটার দৈর্ঘ্য সুপারি উপত্যকা, সেজন্য তাকে নাম দেওয়া হয়েছে সুপারি উপত্যকা। লি জাতির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিতে সুপারি অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পালন করে এবং লি জাতির মানুষের জীবনযাপনের মনোভাব প্রতিফলিত হয়। লি জাতির পরিবারে সুপারি না থাকলে ভদ্রতা দেখা যাবে না, বিয়েও হবে না। হাইনানের মধ্যাঞ্চলের পাহাড়ী অঞ্চলে লি জাতির লোক বসবাস করেন। তারা রহস্য বনের মধ্যে লুগিয়ে থাকেন। পর্যটকরা সুপারি উপত্যকায় গিয়ে লি জাতির সংস্কৃতি অনুভব করতে পারেন। লি জাতি হচ্ছে হাইনানের সর্বপ্রথম আদিম মানুষ। তাদের ইতিহাস নবপ্রস্তর যুগ থেকে শুরু হয়। আজ পর্যন্ত কয়েক হাজার হয়েছে। সুদীর্ঘ ইতিহাসের নদীতে লি জাতির বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। তাদের সবচেয়ে লক্ষণীয় প্রতীক হচ্ছে উলকি সংস্কৃতি। নৃতাত্ত্বিকরা লি জাতির নারীকে 'হাইনানের দুনহুয়াং প্রাচীরচিত্র' মনে করেন। কারণ লি জাতির আদিম নারীদের উলকি করার প্রথা আছে। পথনির্দেশক আমেই জানিয়েছেন, "গাঁয়ের উলকি যত বেশি ও সুন্দর, তার সামাজিক মর্যাদা তত উচু। সাধারণ মেয়ে ছয় বছর বয়স থেকে ১৩ বছর পর্যন্ত উলকি করে। প্রাপ্তবয়স্ক হলে আর উলকি করে না।"



আমেই আরো বলেন, উলকি হচ্ছে টোটেম প্রার্থনার প্রতীক। উলকির মধ্য দিয়ে সুখী জীবন, দুর্যোগ এড়ানো আর যৌবন ও সৌন্দর্য অন্বেষণের কামনা প্রকাশিত হয়। উলকি কেবল লি জাতির সাংস্কৃতিক উন্নয়নের ইতিহাস প্রতিফলিত তা নয়, বরং লি জাতির মানুষ নিজের ধর্ম বিশ্বাস ও সৌন্দর্য অন্বেষণের স্বভাবও প্রকাশিত হয়।
ফুচিয়ান প্রদেশ থেকে আসা পর্যটক মাদাম তোং সুপারি উপত্যকা ভ্রমণের পর আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন, "আমাদের ফুচিয়ান প্রদেশে এ ধরনের জাতিগত জিনিস কম। এখানে সংখ্যালঘু জাতির রীতিনীতির ভাব গভীর। আমাদের ফুচিয়ান সমুদ্রের পাশে অবস্থিত। আমরা সামুদ্রিক জীবন ভালো জানি। কিন্তু এখানকার সংখ্যালঘু জাতির জীবনধারা আমাদের কাছে একদম নতুন। আমি কখনো দেখি নি।"লি জাতির বৈশিষ্ট্যপূর্ণ প্রথাগত সংস্কৃতি বহু দেশি বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করার পাশাপাশি কিছু বিদেশি তথ্যমাধ্যমের দৃষ্টিও আকর্ষণ করেছে। জানা গেছে, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া ও জার্মানীসহ বিভিন্ন দেশের তথ্যমাধ্যম সুপারি উপত্যকায় এসে শুটিং করেছে।


সবুজে ঢাকা প্রাকৃতিক পর্যটন কেন্দ্র হাইনান দ্বীপ
** দক্ষিণ চীনের হাইনান প্রদেশ হচ্ছে চীনের একমাত্র গ্রীষ্মমণ্ডলীয় সামুদ্রিক দ্বীপ। প্রাকৃতিক পর্যটনসম্পদে সমৃদ্ধ এই দ্বীপে আছে পর্যটকদের জন্য পরিবেশ-বান্ধব বাসস্থান। ১৯৯৯ সালে হাইনানকে একটি পরিকল্পিত পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়। এরপর পেরিয়ে গেছে ১৩টি বছর। হাইনানের পর্যটন শিল্প ও অর্থনীতিতে অর্জিত হয়েছে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। তবে, উন্নয়নের এই অগ্রযাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেয়া হয়নি দ্বীপের প্রাকৃতিক পরিবেশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হাইনানের বন ও সমুদ্র সম্পদকে কাজে লাগিয়ে দ্বীপটিকে একটি আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছে। এখানকার বিভিন্ন প্রকৃতিভিত্তিক দর্শনীয় স্থানকে উপস্থাপন করা হয়েছে পরিকল্পিত ও দৃষ্টিনন্দনভাবে। ইয়ালোং উপসাগরের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় স্বর্গ বন পার্ক হাইনান প্রদেশের সানইয়া শহরে অবস্থিত। এ-পার্কের আয়তন 


১৫০৬ হেক্টর। এটি হাইনান প্রদেশের প্রথম উপকূলীয় ও পাহাড়ী প্রাকৃতিক অবকাশযাপনকেন্দ্র। এখানে আছে স্কাই বার্ড নেস্ট অবকাশযাপন গ্রাম; আছে স্বপ্নের মতো গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বৃষ্টিপ্রধান বনাঞ্চল। এই পার্কের অপার সৌন্দর্য আকর্ষণ করেছে চীনের বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক ফাং সিয়াও কাংয়ের দৃষ্টি। তিনি তাঁর একটি চলচ্চিত্রের শুটিং-য়ের পুরোটাই করেছেন এই পার্কে। মুক্তি পাবার পর ছবিটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে পার্কের সুনামও চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে পর্যটকদের অন্যতম পছন্দের স্থান হচ্ছে হাইনান প্রদেশের এই বন পার্ক । সানইয়ান ইয়ালোং উপসাগরের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বন পার্ক কোম্পানি লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান নিয়ে সান লাই আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন, পার্কটির নকশা করার সময় পরিবেশ রক্ষার বিষয়টিকে সবচে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল। বন পার্কটি ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেয়া হয়। এরপর থেকে পর্যটকদের আকর্ষণ করতে এবং মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে সেখানে পর্যটকদের বিনোদনসেবা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। এ প্রসঙ্গে নিয়ে সান লাই বললেন, "বন পার্ক ব্যবস্থাপনা নিয়ম অনুসারে, পর্যটকদের বিনোদনসেবা দিতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণে পার্কের ২ শতাংশ জমি ব্যবহার করা যায়। বিনোদনের ব্যবস্থা থাকলে পর্যটকরা আরো বেশি আকৃষ্ট হয়। আর বেশি পর্যটক মানেই অধিক মুনাফা।"
এখানে পর্যটকরা কেবল পাহাড়ে ওঠার জন্য আসেন না। তাঁরা ক্লান্ত হলে কোন জায়গায় খেতে চান অথবা কোন জায়গায় থাকতে চান। এ-কথা বিবেচনায় রেখেই আমরা পার্কের মধ্যে হাঁটা-পথ এবং গাড়ি-চলা পথ---দুটোই নির্মাণ করেছি। এতে সববয়সী পর্যটকেরই সুবিধা হয়। যুবারা যেমন পায়ে হেঁটে ভ্রমনের আনন্দ পেতে পারেন, তেমনি বৃদ্ধ ও শিশুরা গাড়িতে চড়ে পাহাড়ে ওঠার আনন্দ উপভোগ করতে পারেন। ইয়ালোং উপসাগরের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় স্বর্গ বন পার্ক সৃষ্টি ও উন্নয়নের সময় এতদঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। পাহাড়ে সুউচ্চ ভবন নির্মাণ প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য অনুকূল নয়। তাই বন পার্কে শুধু দোতলা বাসভবন নির্মিত হয়েছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ ও প্রাচীন ঐতিহ্য সুরক্ষার জন্য পাথর, গাছের ছাল, খড়, তালপাতাসহ নানা প্রাকৃতিক উপকরণ দিয়ে লি জাতির নৌকা আকারের বাড়ি আর মিয়াও জাতির মাচান ঘরের অনুকরণে নির্মাণ করা হয়েছে সেসব বাসভবন। পাহাড়ের মাটি ও গাছগাছালি সংরক্ষণের জন্য পাথরের ওপর স্থাপন করা হয়েছে বাসভবনগুলোর ইস্পাতের অবকাঠামো। সেখানে আছে পানি গরম করার সৌরশক্তি চালিত হিটার, আবর্জনা সংগ্রহের জন্য বাঁশের ঝুড়ি, দূষিত পানি পরিশোধন করে পুনরায় ব্যবহার করার ব্যবস্থা ইত্যাদি। এ-প্রসঙ্গে নিয়ে সান লাই বলেন, "লোকজন বেশি হলে, আর্বজনাও বেশি জমে। পরিবেশ রক্ষার জন্য প্রতিদিন আমাদের গাড়ি নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে আবর্জনা সংগ্রহ করে। এরপর সেগুলোকে ধরন অনুসারে ভাগ করে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাগে ভরে নির্ধারিত স্থানে পাঠানো হয়। আমাদের পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সংখ্যা শতাধিক। তারা গোটা পার্ক পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব পালন করেন। আমরা এরই মধ্যে দূষিত পানি পরিশোধনের জন্য সাত-আটটি ছোট আকারের পানি পরিশোধন কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছি। প্রতিদিন এখানে যে পানি ব্যবহৃত হয়, তা পরিশোধনের পর পাইপের মাধ্যমে পার্কে সেচের কাজে লাগানো হয়। এ এক পরিবেশ-বান্ধব আবর্তন ব্যবস্থা। "



বন পার্কের সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য, তাজা বাতাস, উন্নত মানের বিনোদনসেবা ইত্যাদি কারণে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা আজকাল চক্রমবর্ধমান হারে আকৃষ্ট হচ্ছেন।হোনানের চাংচৌ শহরের পর্যটক মাদাম মেং ইয়ুন এই সংবাদদাতাকে বললেন, "এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ ও দৃশ্য ভালো। আমি খুব পছন্দ করি। সৈকতে দাঁড়িয়ে সবুজ সমুদ্র দেখার মজাই আলাদা। আর পাহাড়ে উঠলেতো পুরো ইয়ালোং উপসাগর দেখা যায়। সত্যিই খুব সুন্দর এই দৃশ্য। "
বলাই বাহুল্য, সুস্থ প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় রাখার নীতির ভিত্তিতে, পর্যটন শিল্পের হাত ধরে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সবুজ পথে দৃঢ় পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে হাইনান প্রদেশ।



দ্রুত বিকশিত হাইনান আন্তর্জাতিক পর্যটন দ্বীপ
**হাইনান প্রদেশ চীনের সবচেয়ে দক্ষিণ সীমান্তে অবস্থিত। এ প্রদেশ হচ্ছে চীনের বৃহত্তম বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং একমাত্র গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দ্বীপ প্রদেশ। এ প্রদেশ 'প্রাচ্য হাওয়াই' বলে খ্যাত।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হাইনানের প্রাকৃতিক প্রাধান্যকে কাজে লাগিয়ে চীন সরকার 'হাইনান আন্তর্জাতিক পর্যটন দ্বীপ' উন্নয়নের কৌশল উত্থাপন করেছে এবং লক্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। হাইনান প্রদেশের পর্যটন উন্নয়ন কমিটির উপপ্রধান মাদাম সুন ইং আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন,"আন্তর্জাতিক পর্যটন দ্বীপের উন্নয়ন কৌশল ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে রাষ্ট্রীয় পরিষদের অনুমোদন পায়। এর জন্য চীন সরকার ধারাবাহিক সুবিধা-নীতি কার্যকর করেছে। এ নীতিগুলো হাইনান দ্বীপের উন্নয়নে বড় ভূমিকা পালন করেছে।"কেন্দ্রীয় সরকারের ধারাবাহিক সুবিধা-নীতিগুলোর মধ্যে দ্বীপ শুল্কনীতি সবচেয়ে আকর্ষণীয়। এখন হাইনান প্রদেশের হাইখো ও সানইয়া শহরে শুল্কমুক্ত দোকান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমাদের সংবাদদাতা লক্ষ্য করেছেন, প্রায় ৭ হাজার বর্গমিটার আয়তনের সানইয়া শহরের শুল্কমুক্ত দোকানে পারফিউম, অলংকার, ঘড়ি ও চামড়া পণ্যসহ কয়েক ডজন ধরনের ২০ হাজারেরও বেশি পণ্য বিক্রি হয়। এ শুল্কমুক্ত দোকানে প্রায় একশ'টি বিলাসদ্রব্যের ব্র্যান্ড আছে। এ সব পণ্যের দাম চীনের অভ্যন্তরীণ বিভাগীয় বিপণির চেয়ে ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ কম।
সুবিধা-নীতিগুলো হাইনানের আন্তর্জাতিক পর্যটন দ্বীপের উন্নয়ন কৌশল বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে খুব সহায়ক হয়েছে। এর পাশাপাশি হাইনান প্রদেশ নিজের সমৃদ্ধ পর্যটন সম্পদের ভিত্তিতে 'বিশ্বের প্রথম উপসাগর' নামে পরিচিত ইয়ালোং উপসাগর আর উচি পাহাড়সহ কিছু চমত্কার পর্যটন স্থান প্রতিষ্ঠা করেছে। তা ছাড়া, হাইনান প্রদেশ পর্যটন সম্পদের প্রচারের মাত্রা বাড়িয়েছে। তারা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে নানা রকম আন্তর্জাতিক পর্যটনমেলা আর বিশেষ প্রচারসভায় অংশগ্রহণ করে। চীনের বিভিন্ন প্রদেশ ও কেন্দ্রশাসিত মহানগরে গিয়ে নানা পর্যটনমেলায় অংশগ্রহণ করে। তারা অনেক উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলন, ফোরাম ও প্রদর্শনীর আয়োজন করে। বিশেষ করে ভলভো নৌকা বাইচসহ নানা আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের মধ্য দিয়ে হাইনান বিশ্ববিখ্যাত এক তারকা পর্যটন স্থানে পরিণত হয়েছে।
পর্যটন শিল্প উন্নয়নের উদ্দেশ্যে হাইনান প্রদেশ সংশ্লিষ্ট কর্মীদের প্রশিক্ষণের মাত্রা জোরদার করেছে। জানা গেছে, ২০১১ সালে হাইনান প্রদেশ পল্লীপর্যটন, সমুদ্রপর্যটন, গলফপর্যটন, রেস্তোঁরা ও দর্শনীয় স্থানের সেবকদের জন্য আটটি প্রশিক্ষণ কোর্স আয়োজন করে, ১১,৫০০ জন পথনির্দেশককে প্রশিক্ষণ দেয়। হাইনানের সেবাশিল্পে জড়িত ৯০.৭ শতাংশ কর্মী বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। সানইয়া ইয়ালোং উপসাগরের ভূস্বর্গ অবকাশগ্রামে কর্মরত মাদাম লি সংবাদদাতাকে বলেন,"আমি মনে করি, সাম্প্রতিক কয়েক বছরে হাইনানের পর্যটন কর্মীদের পরিসেবা-সচেতনতা আর নিজের কর্মপরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। বিশেষ করে সেবা আর ভাষার দিকে অনেক উন্নতি হয়েছে।"হাইনান দ্বীপ তার বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সামুদ্রিক দ্বীপের শৈলী দিয়ে দিন দিন আরো বেশি দেশি-বিদেশি পর্যটক আকর্ষণ করছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১১ সালে হাইনান প্রদেশ মোট ৩ কোটি ১০ হাজার পর্যটককে অভ্যর্থনা জানায়। এর আগের বছরের তুলনায় এ সংখ্যা ১৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। পর্যটন শিল্পের মোট আয় দাঁড়ায় ৩২.২ বিলিয়ন ইউয়ানে, যা এর আগের বছরের চেয়ে ২২ শতাংশ বেশি।
হাইনানের সানইয়া শহরের কানশিলিং লি ও মিয়াও জাতির সংস্কৃতি ও পর্যটন অঞ্চলে আমাদের সংবাদদাতা রাশিয়ার পর্যটক ভ্লাদিমিরের সঙ্গে কথা বলেন। ভ্লাদিমির বলেন,"চীনের সুদীর্ঘ ইতিহাস আছে। আমি বহু দিন ধরে চীনকে পছন্দ করি। আমি কেন হাইনান বাছাই করেছি, এর কারণ হচ্ছে হাইনানে সৈকত আছে। এখানটা অপেক্ষাকৃত গরম। তথাপি রাশিয়া অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা। এখানকার সামুদ্রিক দৃশ্য অতি সুন্দর। জলবায়ুসহ নানা ক্ষেত্রের অবস্থা মন্দা না।" উন্মুক্ত নীতি, শ্রেষ্ঠ সম্পদ আর নিরলস প্রচেষ্টার দ্বারা হাইনান আন্তর্জাতিক পর্যটন দ্বীপ নির্মাণের পথে বড় পদক্ষেপে এগিয়ে যাচ্ছে।

REPORT: REDOY

মোবাইল: +৮৮ ০১৭১৫৬৬৯৫৫৪।
web:http://www.fdcradio.blogspot.com
facebook:www.facebook.com/kushtia.rana

1 comment:

ঢাকায় ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের সাংবাদিককে সংবর্ধনা, ভিওএ ফ্যান ক্লাবের সদস্য ও নিয়মিত শ্রোতাদের আলাপচারিতা

  ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২১। বুধবার। ঢাকা। আসসালামু আলাইকুম। ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের সাংবাদিক আহসানুল হককে সংবর্ধনা, ভিওএ ফ্যান ক্লাবের...